প্রাণ বাঁচানোর ভালোবাসা-কৃতজ্ঞতা ! ৫ বছর ধরে প্রতিবছর ৮ হাজার মাইল সাঁতর...

৫ বছর ধরে প্রতিবছর ৮ হাজার মাইল সাঁতরে কাছে আসে পেঙ্গুইন


ব্রাজিলের জোয়াও পেরেইরা ডি সুজা ছিলেন রাজমিস্ত্রি। অবসরের পরে এখন মাঝে মাঝে মাছ ধরেন। একদিন গিয়েছিলেন রিও ডি জেনেইরোর সমুদ্র উপকূলে। মাছ ধরতে যাওয়ার আগেই আটকে গেলেন সমুদ্রের পাড়ে। ওটা কী পড়ে আছে? নজর গেল জোয়াওয়ের।


কাছে গিয়ে দেখেন একটা পেঙ্গুইন। সারা দেহ তেলে ঢাকা। ভেসে এসেছে সমুদ্রে। মাছ ধরা আর হলো না। ধুঁকতে থাকা পাখিটিকে বাড়ি নিয়ে গেলেন জোয়াও। এক সপ্তাহ ধরে তার সেবা চলল।

সার্ডিন মাছ ধরে এনে তাকে খাওয়াতেন জোয়াও। এক সপ্তাহ পরে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারল ম্যাগেলানিক প্রজাতির সেই পেঙ্গুইন। তবে তখনো তার গায়ে গজায়নি নতুন পালক। ততদিনে নতুন নামকরণ হয়েছে তার। জোয়াও ডাকেন ডিনডিম বলে।
মন খারাপ হলেও জোয়াও ঠিক করলেন ডিনডিমকে ফিরিয়ে দেবেন তার ঠিকানায়। সেইমতো একদিন সমুদ্রে নিয়ে গিয়ে তাকে ছেড়ে দিলেন। কিন্তু কিছুতেই গেল না সেই পোষ্য। ফিরে এলো জোয়াওয়ের সঙ্গেই। তার পর আর ওকে চলে যেতে বলেননি জোয়াও। ১১ মাস সেবাযত্নের পরে ডিনডিমের দেহে গজাল নতুন পালক। একদিন নিজেই চলে গেল সে।   

প্রিয় পোষ্যকে হারিয়ে মন খারাপ হয়ে গেল জোয়াওয়ের। কিন্তু এই বলে মনকে বোঝালেন‚ ডিনডিম তার নিজের বাড়িতে ফিরে গেছে। সবাই তাকে বলল‚ আর মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই। ও আর ফিরে আসবে না। কিন্তু মন মানতে চাইল না জোয়াওয়ের। কেন যেন মনে হতে লাগল‚ ডিনডিম ঠিক ফিরে আসবে!

এ ছিল ছয় বছর আগের ঘটনা।

জোয়াওয়ের মন কিন্তু ঠিকই বুঝেছিল। ফিরে এসেছিল ডিনডিম। বলা ভালো‚ প্রতিবছর আসে সে। আট হাজার কিলোমিটার সাঁতরে পাড়ি দিয়ে জোয়াওয়ের কাছে আসে ডিনডিম। জুন মাসে আসে। নিজের বাড়ির দিকে রওনা দেয় পরের ফেব্রুয়ারিতে। বছরের অর্ধেকের বেশি সময় কাটায় বন্ধু জোয়াওয়ের সঙ্গে। গত পাঁচ বছরে ঘড়ি ধরে চলেছে এই নিয়ম।

শুধু থাকাই নয়। ডিনডিম রীতিমতো লেজ নাড়ে জোয়াওকে দেখে। কোলে উঠে ঘুমোয়। ডিনডিম জোয়াওয়ের কাছে নিজের ছোট্ট ছেলের মতো।

প্রাণিবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন‚ ম্যাগেলানিক পেঙ্গুইনদের সাধারণ আবাসস্থল আর্জেন্টিনা-চিলির প্যাটাগোনিয়া উপকূল। সেখান থেকেই সাঁতার কেটে আসে পেঙ্গুইন ডিনডিম। দূরত্ব চার হাজার থেকে আট হাজার কিলোমিটার। এভাবেই তার ৭১ বছর বয়সী মানুষ-বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা-কৃতজ্ঞতা জানায় পেঙ্গুইন ডিনডিম। গবেষকদের কাছে এই অদ্ভুত সম্পর্কের রসায়ন এখনও রহস্যময়।

Video

                       


No comments

Thanks for you comment

Powered by Blogger.